সুদূরের কণ্ঠস্বর

কিছু কথা, কিছু ব্যাথা, কিছু ভালোলাগা আর হৃদয়ের আর্তি নিংড়ে গড়ে ওঠা এক অনুভূতির জগত...

স্পর্শহীন অনূভুতি



রাতগুলো এমন হয় কেন? কেন নস্টালজিয়ায় বাঁধা পড়ে যায় সময়? কেন???




একেকটি রাত কাটে নিদ্রাহীনতায়
সঙ্গোপনে ফেলি চোখের জল
আমার হৃদয়ের জ্বলন্ত আগুনটা
আমি নিভিয়ে ফেলতে চাই
দু'চোখের সমস্ত অশ্রু দিয়ে।
কিন্তু আমার অশ্রুগুলো বড় নিষ্ঠুর
আগুন না নিভিয়ে আরও বাড়িয়ে দেয়।


রাতে যখন শুয়ে থাকি
জানালা দিয়ে চাঁদের আলো আসে
শুভ্রতায় ভরিয়ে দেয় আমার বিছানা
চেয়ে থাকি নিঃসীমতায়
হঠাৎ কাকে যেন দেখতে পাই
স্বপ্নকুমারী ! না ! কল্পবাসরী !
আস্তে আস্তে তার অবয়ব দৃশ্যমান হয়
একসময় সে আমার বিছানায় এসে বসে
কখনোবা শুয়ে পড়ে, আমার পাশে,
মাথায় হাত রেখে আদর করে দেয়,
কখনো মিষ্টি কন্ঠে গান গায়;
তার সুর প্রতিধ্বনিত হয়ে ছড়িয়ে পড়ে-
প্রগাঢ় অন্ধকার ভেদ করে চলে যায়
দূর দিগন্তে: তারপর আস্তে আস্তে-
ঝাপসা হয়ে আসে তার অবয়ব
তবু কানে বাজতে থাকে সেই চেনা সুর।


তার মুখটা কখনো চিনতে পারিনা,
তবে অনুভব করতে পারি।
আজ থেকে চৌদ্দ বছর আগে
আমি তার সবথেকে কাছে থেকেছি,
তার সাথে হেসেছি, খেলেছি, গল্প করেছি।
একসময় হারিয়ে ফেলেছি।


আমি তাকে এখনো খুঁজি;
পৃথিবীর প্রতিটি নারীর মাঝে
আমি তার প্রতিচ্ছবি খুঁজে যাই।
কল্পনায় তাকে অনুভব করি।
তার স্পর্শ, দেহের গন্ধ,
আমাকে আজও মাতাল করে।


একসময় আমার শিরায়-উপশিরায় ছড়িয়ে পড়ে
লক্ষ-কোটি জীবাণুর উলঙ্গ আক্রোশ।
তাদের বিজয়ের অতৃপ্ত উল্লাস।
বুকের মাঝে হৃদপিন্ডটা হঠাৎ স্তব্ধ হয়ে যায়
তবু তাকে দেখার বাসনা থেকে যায় মনে;
অদম্য, অকৃত্রিম, বন্য এক বাসনা।


সে একজন নারী,
একজন প্রেমিকা
এবং
একজন মা।


***************************************

পৃথিবীর সকল অকালপ্রয়াত "মা" কে উৎসর্গীকৃত....................যাদের অভাব কখোনো পূরণ হয় না, হবার নয়।

অণুকাব্য-১


ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনুভূতির অপূর্ণ অবয়ব......... .






১.
তোমার ছায়ার মিথ্যে মায়ায়
হারিয়ে যখন নষ্ট আঁধারে
খুঁজে পেতে চাই ব্যর্থ আলো
অচেনা অতীত যাক হারিয়ে।

************

২.
নগ্ন দেহের তীব্র মায়ায়
হাজার কীটের বিকৃত ত্রাস
নষ্ট মনের অচেনা ছায়ায়
নোংরা ফুলের মিষ্টি সুবাস।

************

৩.
বেলা শেষে যুদ্ধ শুরু
তোমার আমার নোংরা ছায়ায়
আঁধার যখন ঘনিয়ে আসে
আমি জয়ী তোমার মায়ায়।

অণুকাব্য-২


 ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র শব্দগুচ্ছের বিচিত্র অবয়ব.......






১.
নীল আঁধারের অন্ধ আলোয়
নগ্ন চোখে ঝাপসা প্রলয়
অন্য আলোয় আলোকিত মুখ
আমার অলো শূণ্যে মিলায়।

**************

২.
অতীত ফিরে আসুক বারে বারে
ভবিষ্যৎ হয়ে
বর্তমানের আমি হারিয়ে যাব
মহাকালের আঁধারে।

**************

৩.
নীলচে মায়ার তীব্র আলোয়
অন্ধকারের প্রতিচ্ছবি
তপ্ত আশার ভলোবাসায়
আমি এখন ব্যর্থ কবি।


রাত্রিস্নান

কোন কোন রাত মানুষের কাটে খুব অন্যরকমভাবে। স্মৃতি- বিস্মৃতির নস্টালজিয়ায় বাঁধা পড়ে যায় সময়। কি যেন একটা নেই! পেটের ভেতর গুলিয়ে উঠতে থাকে শূণ্যতা, আর বুকের ভেতর জমাট বাধে হাহাকার। একেকটা রাত হয়ে যায় সময়ের একেকটা কৃষ্ণগহব্বর।


 


আজকাল অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকি।
কেন যেন ঘুম ধরে না
কোলবালিশটা আঁকড়ে ধরে-
এপাশ-ওপাশ করতে থাকি।
কখনো পাশে শোয়ানো মোবাইলটা তুলে
সময়টা জেনে নেই, আচ্ছা-
গভীর রাতে সময়টা শ্লথ হয় কেন?
আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতার কোনো-
উদাহরণ নয়তো! অফ্..
আবার সায়েন্সের কচকচানি!
তারচেয়ে বরং ওই রাতগুলোকে ভাবি


গভীর রাত-
আকাশে স্বীয় মহিমায় উজ্জ্বল চাঁদ
আর তারচেয়েও সুন্দর তার আলো
চারপাশে অজস্র নক্ষত্র-
কালপুরুষ, বৃশ্চিক অথবা সপ্তর্ষি,
অনিন্দ্যময় সুবিশাল আকাশ
কারাগারসদৃশ চারদেয়ালে বন্দী
অথচ মুগ্ধ এক কিশোরের চন্দ্রস্নান
নিজেকে বিলীন করে দেয়া প্রকৃতিতে
কিম্বা মহান হওয়ার প্রতিশ্রুতি
আকাশের মতো..


এখনও গভীর রাত
চারপাশে কেউ জেগে নেই
হয়তো অনেকে জেগে আছে-
প্রিয়তমেষুকে ভালোবাসার মগ্নতায়।
আর আমি....


ইদানিং বন্ধুরা জিজ্ঞেস করে,
"কিরে, এত রাত জেগে-
তুই কি করিস?!"
আমি মিচকি হেসে বলি,
"আরে বোকা, এটা বুঝিস না!
বিয়ের পরের দিনগুলোর প্র্যাকটিস করি!"

অসমাপ্ত কবিতা


মানুষের মন খুব চঞ্চল। জীবনের চলার পথে কখন যে কাকে ভালো লেগে যায়, কেউ বলতে পারে না। সেই ভালোলাগার কথা তাকে কি বলা যায়? না বলা কথাগুলো জমাট বেধে যখন অলিন্দের চাপ বাড়াতে থাকে, অনুভূতির প্রগাঢ়তায় তখন জন্ম হয় কবিতার।



ভুলে যাও জীবনের দুঃখগুলো
খুঁজে নাও সুখ-
বেরিয়ে এস কষ্টের বৃত্ত থেকে।
কেঁদো না নিজে,কাঁদিওনা কাউকে
উদ্ভাসিত হও স্বর্গীয় হাসিতে।
হয়ত কেউ দেখছে তোমায়,
বহুদূর থেকে,সঙ্গোপনে
যে তোমার পাশে থকে অনুক্ষণ
আজও বুঝলে না তাকে,
চিনলেনা কোনদিনই।
অভিমানে তাকে দিও না দুঃখ-
হয়ত সে কাঁদে তোমার কষ্টে,
পরম বন্ধুর মত-
নিভৃতে,একাকী বসে।

প্রতীক্ষিত প্রাপ্তি


অপেক্ষার প্রহরগুলো অনেক সুন্দর, আবার তাও যদি হয় সুন্দর কোন মানুষের জন্য। কিন্তু সেই সুন্দর মানুষটি যদি আসার আগেই হারিয়ে যায়! যদি প্রকৃতির দুর্লঙ্ঘ্য নিয়মের বেড়াজালে সাত পাকে বাঁধা পড়ে যায়!




বৃষ্টি আসবে
বহু প্রতীক্ষিত বৃষ্টি
উদ্দাম বাতসের তান্ডব চলবে-
আমার পৃথিবীতে।
শুধুই অন্ধকার, নিষ্প্রদীপতা।
আমি নগ্ন হয়ে ভিজব।
বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা
ছুঁয়ে যাবে আমার ওষ্ঠ,
আমার চিবুক, আমার দেহ।
স্পর্শে আমি হব পবিত্র।


হে বৃষ্টি!
আমি তোমার অপেক্ষায় আছি।
নির্জন অরণ্যে, নিভৃতে;
শুধু তোমারই স্পর্শ পেতে।


আকাশে বাতাসে বজ্রের হুংকার
ঈশ্বর নেমে এসেছে পৃথিবীতে
চারপাশে তার দূতের বেষ্টনী
আর-
তার মাঝে আদিমতার উল্লাস।
তীক্ষ্ণ আর্তনাদ – আমার পৃথিবীতে,
একবার,
তারপর, সব চুপ, নিস্তব্ধতা!
কোথাও কেউ নেই।

রক্তাক্ত উল্লাস (রক্তাক্ত সুখ-এর ২য় পত্র)


মানুষ পৃথিবীতে আসে একাকী। দিনে দিনে এখানে সে অনেককে দেখে, মেশে। অনেকের জন্য হৃদয়জুড়ে তৈরী হয় দুর্নিবার অনুভূতি। তারপর...........এক সময় সব শেষ হয়ে যায়। নিঃসঙ্গতার নীল আলোয় আবগাহন করতে করতে হারিয়ে যেতে হয় মহাকালের অতল গহ্বরে.....। কেউ কি বলতে পারে, কেন এমন হয়?




গীর্জাটি এখনো পড়ে আছে
নির্জন,স্পন্দনহীন কোন স্থানে
পরিচর্যার কেউ নেই
ছোঁয়াও হয় না বাইবেলটি
দেয়ালে আশ্রয় নিয়েছে গাছ
আগাছা আগলে রেখেছে পথটি।


প্রদীপটি নিভে গেছে।
অন্ধকারে পড়ে আছে যীশু
নিভৃতে,ঘুণে ধরা বেদীর ওপরে।
যীশুর সমস্ত দেহে এখন
ময়লার পুরু আস্তরণ।
আসে না ঈশ্বরের দূত;
ঈশ্বর ভুলে গেছেন যীশুকে।
গীর্জার প্রতিটি বর্গ ইঞ্চিতে
এখন শুধুই রক্তের গন্ধ।

রক্তাক্ত সুখ

শূণ্যতার মাঝে কেউ কিছু খোঁজে না। আমি খুঁজি। আমার হারিয়ে যাওয়া সত্তাকে, আমার আমাকে। জীবনের পথে নিয়ত হেঁটে চলা ক্লান্ত, রিক্ত এই পথিকের অপেক্ষার শেষ কোথায়?





একে একে সবাই চলে গিয়েছে
প্রার্থণার পর, শূণ্য গীর্জা
পড়ে থাকে আবছা অন্ধকারে
হঠাৎ আলোকিত হয় বেদী
ঈশ্বরের দূত অবস্থান নেয়
একটি মোমের উপর
যীশু আর একা নয়
সে এখন ক্রুশবিদ্ধ, রক্তাক্ত
এবং নগ্ন এক সুখী পুরুষ।

অবাস্তব আকাঙ্খা

প্রতিটি মানুষেরই কিছু না কিছু আকাঙ্খা থাকে, থাকে তাদের না পাওয়ার হাহাকার। অবাস্তব সেই আকাঙ্খাগুলো বাস্তবতার সাথে তৈরী করে অনেক দূরত্ব। মানুষ তার সারাটা জীবন ধরে চেষ্টা করে এই দূরত্ব কমানোর। পারেনা। আর পারেনা বলেই সেই আকাঙ্খাগুলোর স্পর্শ নিয়ে বেঁচে থাকতে চায়। সময় চলে যায় কিন্তু জীবন তো থেমে থাকে না.........




তুমি কেন এত সুন্দর?
কোন্ অপার্থিব নীলিমায় সৃষ্টি?
অস্পৃশ্যতার আড়ালে অনুভূতির ছোঁয়া
অবাস্তবতার সুস্পষ্ট দেয়াল
যাকে ভাঙতে আমি অপারগ।


তোমায় খুঁজে ফিরি আমি-
অদৃশ্যালোকে, তবুও প্রাকৃতিক পরিবেশে
তোমার প্রত্যক্ষ আস্তিত্বিক প্রকাশ।
যেভাবে খুঁজে ফেরে জ্যোতির্বিদ;
নীহারিকা, দূর নক্ষত্রালোকে।


আমার ব্যার্থতায় আমার বিরহ
প্রতিক্ষণে আমার আর্ত হাহাকার
প্রতিটি রাত, দুঃস্বপ্নময়।
দূর হতে ভেসে আসা কন্ঠস্বর-
চিনিয়ে দেয় নিজেকে।


আমার আকাঙ্খার মাঝে তুমি
নারী নও, কোন এক মায়াবী সত্তা;
তোমাকে পাবার আকাঙ্খায় আমি
বেঁচে রব, জন্ম থেকে জন্মান্তরে।


তবু জানি, পাবনা তোমায়
কোনদিনই-
কেননা তোমাকে শুধুই অনুভব করা যায়,
ভোগ করা যায় না।

অচেনা আবরণ

মানুষের মন খুব চঞ্চল। জীবনের চলার পথে কখন যে কাকে ভালো লেগে যায়, কেউ বলতে পারে না। সেই ভালোলাগার কথা তাকে কি বলা যায়? না বলা কথাগুলো জমাট বেধে যখন অলিন্দের চাপ বাড়াতে থাকে, অনুভূতির প্রগাঢ়তায় তখন জন্ম হয় কবিতার।




ভুলে যাও জীবনের দুঃখগুলো
খুঁজে নাও সুখ-
বেরিয়ে এস কষ্টের বৃত্ত থেকে।
কেঁদো না নিজে,কাঁদিওনা কাউকে
উদ্ভাসিত হও স্বর্গীয় হাসিতে।
হয়ত কেউ দেখছে তোমায়,
বহুদূর থেকে,সঙ্গোপনে।
যে তোমার পাশে থকে অনুক্ষণ
আজও বুঝলে না তাকে,
চিনলেনা কোনদিনই।
অভিমানে তাকে দিও না দুঃখ-
হয়ত সে কাঁদে তোমার কষ্টে,
পরম বন্ধুর মত-
নিভৃতে,একাকী বসে।

এ পর্যন্ত যারা এখানে এসেছেন

কবিতার খাতা

কপি - পেস্ট সুরক্ষিত ব্লগ

Protected by Copyscape Originality Checker

কপিরাইট

Creative Commons License
সুদূরের কণ্ঠস্বর by jabir rizvi is licensed under a Creative Commons Attribution-Noncommercial-Share Alike 3.0 Unported License for jabirrizvi.blogspot.com.

মোহনার বালুচরে , একসাথে..